অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি নতুন সময়সূচী ২০২৪
বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও আবেদন নিস্পত্তির নতুন সময়। না জানলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে পারেন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইন এমপিও আবেদন সমূহ নিস্পত্তি করার সময়সূচী ঘোষণা করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ২১ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি: তারিখে মাউশি বর্তমান মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত বা কর্মরত শিক্ষক বা কর্মচারীদের মাসিক পে অর্ডার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের ফাইল আগে প্রতি জোড় মাসের ০৮ তারিখের মধ্যে প্রেরণ করতে হতো। এই পরিপত্রের মাধ্যমে সময়টি বদলে গিয়ে ০৬ তারিখে নিয়ে আসা হয়েছে।
অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি
বেসরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষক বা কর্মচারী যারা এনটিআরসিএ অথবা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নতুন এমপিও আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনলাইন আবেদনের নিয়ম অনুসরণ করে ইএমআইএস পোর্টাল ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করেন।
ইএমআইএস এর মাধ্যমে জমাকৃত এম পি ও সংক্রান্ত আবেদনগুলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক যাচাই বাছাই করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করেন।
তৃতীয় ধাপে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাগণ আবারও যাচাই করেন এবং নির্ভুল ও উপযুক্ত আবেদনগুলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক বা মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালক এর ফরওয়ার্ড করেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আঞ্চলিক পরিচালক অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি করে মাউশি অধিদপ্তরে পুনঃ যাচাই এর জন্য সেন্ড করেন যা পরবর্তী মাসের এমপিও সভায় আলোচনায় গৃহিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিস্পত্তি করা হয়।
নতুন এমপিও, ট্রান্সফার, বিএড স্কেল, উচ্চতর স্কেল, এমপিও সংশোধন, এরিয়ার, ইনডেক্স ডিলিট বা রিলিজ আবেদন যাই হোক না কেন মোট ০৬ টি ধাপে বর্তমানে নিস্পতি করা হয়। প্রত্যেক ধাপে কর্মকর্তাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) অনলাইন এমপিও সংক্রান্ত যাবতীয় আবেদন নিস্পত্তি করার সময়সীমা পূণঃ নির্ধারিত হয়েছে।
স্কুল ও কলেজ এর এমপিও নিস্পত্তির নতুন সময়সীমা
অধিদপ্তর এর আওতাধীন আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের অবগতি ও কার্য সম্পাদনের জন্য মাউশি মহাপরিচালক ২১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে একটি অফিস আদেশ জারী করেন যেখানে এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল এবং কলেজ এর কর্মরত বা নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক বা কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি পাওয়ার জন্য অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি করার বিভিন্ন ধাপের সময়সূচী পুনরায় নির্ধারণ করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও আবেদন প্রতি জোড় মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে সাবমিট করতে হবে। অনেক সময় সফটওয়্যার জটিলতায় নতুন এমপিও আবেদন করতে সমস্যা হতে পারে তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের নতুন এমপিও আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করে রাখতে হবে যাতে যথা সময়ে আবেদন জমা দেওয়া যায়।
মাউশি কর্তৃক নির্ধারিত এমপিও আবেদন সংক্রান্ত সময়সীমা
পর্যায় / ধাপ | নিস্পত্তিকারী কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা | বিবরণ |
---|---|---|
০১ | প্রতিষ্ঠান প্রধান | প্রতি জোড় মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে অনলাইনে প্রেরণ করবেন। |
০২ | উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা | প্রতি জোড় মাসের ১২ তারিখের মধ্যে নিস্পত্তি করবেন। |
০৩ | জেলা শিক্ষা অফিসার | প্রতি জোড় মাসের ২০ তারিখের মধ্যে; |
০৪ | আঞ্চলিত পরিচালক / উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) | প্রতি বিজোড় মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে; |
০৫ | মাউশি অধিদপ্তরে পুনরায় যাচাই | মাউশি সংশ্লিষ্ট শাখা প্রতি বিজোড় মাসের ০৮ তারিখের মধ্যে যাচাই করে EMIS সেল এ ফরওয়ার্ড করবেন। |
০৬ | এমপিও সভা | প্রতি বিজোড় মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এমপিও সভা অনুষ্ঠিত হবে। |
উপরোক্ত আদেশের মর্মানুযায়ী প্রতি জোড় মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে এমপিও অনলাইন আবেদন প্রেরণ করবেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেই মাসের ১২ তারিখের মধ্যে নিস্পত্তি করে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠালে ২০ তারিখের মধ্যে যাচাই করে জেলা শিক্ষা অফিসারগণ আঞ্চলিত পরিচালক / উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) এর হেড-এ পাঠাবেন।
পরবর্তী মাস প্রতি বিজোড় মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে আঞ্চলিত পরিচালক / উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) নিস্পত্তি শেষে মাউশি সংশ্লিষ্ট শাখা প্রতি বিজোড় মাসের ০৮ তারিখের মধ্যে যাচাই করে EMIS সেল এ ফরওয়ার্ড করা হবে। ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এমপিও সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে এমপিও সংক্রান্ত আবেদন প্রেরণ
শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর সর্বশেষ পরিমার্জন অনুযায়ী যেকোন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল ও কলেজ এ এনটিআরসিএ বা কমিটি দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক বা কর্মচারীদের নতুন এমপিও আবেদন বা কর্মরতদের এরিয়ার, উচ্চতর গ্রেড, ট্রান্সফার আবেদন প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে জমা দিবেন।
নতুন সময়সূচী মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনলাইনে এমপিও সংক্রান্ত আবেদন প্রেরণ প্রতি জোড় মাসের অর্থ্যাৎ ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুন, আগষ্ট, অক্টোবর, ও ডিসেম্বর ০৬ তারিখের মধ্যে MPO Online Application সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যাচাই বাছাই করে মাউশি মহাপরিচালক বরাবর ফরওয়ার্ডিং করবেন।
যদিও এই আদেশের আগেও মাউশি শিক্ষকদের এমপিও আবেদন যথা সময়ে নিষ্পত্তির নির্দেশ জারী করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এবার নতুন করে সেই সময়গুলো বদলে দেওয়া হলো।
নির্ভুল এমপিও আবেদন করার জন্য এমপিও আবেদনের শিক্ষক-কর্মচারীদের যে বিষয়গুলো যাচাই করা হবে তা জানা থাকলে প্রথমবারেই কোনো ঝামেলা ছাড়া শিক্ষকরা বেতন পেয়ে যায়। প্রাথমিক আবেদন ভুল করলে অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা তৈরি হয় যার কারনে এমপিও পেতে সময় লেগে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে মাদ্রাসাসমূহে চাকরি করে শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অন্যন্য পদে স্কুল বা কলেজে চাকরিতে যোগদান করেন। সেক্ষেত্রে মাদ্রাসা থেকে স্কুল-কলেজে যোগদান করা শিক্ষকদের এমপিও করবেন যেভাবে তা পূর্বেই জেনে নিয়ে আবেদন করতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক অনলাইন এমপিও আবেদন নিস্পত্তি
বেসরকারি স্কুল ও কলেজ এর প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকে প্রেরিত অনলাইন এমপিও আবেদন সমূহ দ্বিতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিকট জমা হবে। সেসব আবেদন এর প্রাথমিক যাচাই শেষে ঐ মাসের ১২ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করে জেলা শিক্ষা অফিসারের এমপিও পোর্টালে প্রেরণ করবেন।
প্রতি বছর জোড় মাসসমূহ অর্থ্যাৎ ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুন, আগষ্ট, অক্টোবর, ও ডিসেম্বর ০৬ তারিখের মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ নির্ধারিত নিয়মে নিস্পত্তি করে উর্ধতন কর্মকর্তাকে পাঠাবেন।
দক্ষতা ও সতর্কতার সাথে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণ এমপিও আবেদন এ বিষয়গুলো যাচাই করলে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও ফাইল নিস্পত্তি ৫০% এর বেশি সম্পন্ন হয়ে যায়।
জেলা শিক্ষা অফিসারের এমপিও নিস্পত্তির সময়সীমা
এমপিও অনলাইন আবেদন এর তৃতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসার উপজেলা থেকে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ সে মাসের ২০ তারিখের ভেতর যাচাই করে অগ্রায়ন করতে হবে।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে অনলাইন এমপিও আবেদনসমূহ বছরের জোড় মাসে মানে যে মাসে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেরণ হবে সে মাসেই নিস্পত্তি করার নির্দেশনা আছে।
আঞ্চলিত পরিচালক / উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) এর এমপিও অগ্রায়ণ
বছরের প্রতি বিজোড় মাস অর্থ্যাৎ মার্চ, মে, জুলাই, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসের ০৬ তারিখের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রেরিত এমপিও অনলাইন আবেদন সমূহ পুনঃ যাচাই বাছাই করে অনুমোদন করবেন। এটি এমপিও প্রাপ্তির আবেদন এর প্রথম অনুমোদন।
আঞ্চলিত পরিচালক / উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) এর এমপিও অনুমোদন করলে এমপিও প্রাপ্তির কার্যক্রম ৭০% সমাপ্ত হয়ে যায়। এই ধাপে আবেদন অগ্রায়ণ হলে বেতন প্রাপ্তিতে আর কোনো বাঁধা থাকে না।
মাউশি শাখায় এমপিও আবেদন অনুমোদন
আঞ্চলিত পরিচালকদের অনুমোদিত আবেদনসমূহ মাউশি সংশ্লিষ্ট শাখায় পুনরায় যাচাই বাছাই করা হবে সেই বিজোড় মাসের ০৮ তারিখের মধ্যে এবং সেটি ইএমআইএস সেল পাঠানো হবে।
টানা পাঁচটি ধাপে চুলছেড়া বিশ্লেষণ এর পর বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের নতুন এমপিও প্রাপ্তির আবেদন, উচ্চতর গ্রেড, এমপিও সংশোধন, বকেয়া বেতন ভাতার আবেদন বা ট্রান্সফার আবেদনসমূহ চূড়ান্ত অনুমোদন এর জন্য প্রতি বিজোড় মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এমপিও সভা আয়োজন করে এমপিও প্রকাশ করা হবে।
পরিশেষ
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অল্প বেতনে চাকরিতে প্রবেশ করে মাসিক বেতন ভাতা পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। অসাবধানতায় বা অবহেলার জন্য এমপিও আবেদন রিজেক্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এটি এড়াতে আবেদন করার পূর্বেই নিয়মাবলি পড়ে যথাযথভাবে ফাইল সাবমিট করবেন।
বাংলা নোটিশ ডট কম এর এমপিও সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এই বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়ার সাথে সাথে পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হয়। আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন।